বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ করোনাভাইরাসের নতুন ধরনে সংক্রমিত হচ্ছেন। নতুন ধরনগুলো মানুষের মনে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যেমন: আক্রান্ত হলে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি কিনা? মারাত্মক জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে কিনা? ভ্যাকসিন এ ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর? রক্ষা পেতে নতুন কী করতে হবে? প্রশ্নগুলোর উত্তরে মেডিসিন ফর ডেটা ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড অ্যানালাইটিকসের সহ-সভাপতি স্টুয়ার্ট রে এবং জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রবার্ট বোলিঙ্গার বলেন, করোনাভাইরাস আরএনএ ভাইরাস বলে এটি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত ও বিবর্তিত হয়। ভাইরাসের জিন সংক্রান্ত পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হলো, ভৌগোলিক প্রভাব। এই ভাইরাসের মিউটেশন নতুন কোনো ঘটনা নয়, অপ্রত্যাশিতও নয়। তিনি আরো জানান, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাসের একটি পরিবর্তিত সংস্করণ ধরা পড়ে। ধরনটি এখন বি.১.১.৭ নামে পরিচিত।
এটি যুক্তরাজ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সেখানে ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন কোভিড-১৯ কেসের প্রায় ৬০ শতাংশে বি.১.১.৭ এর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এছাড়া বর্তমানে আরো কিছু দেশে এর প্রাধান্য রয়েছে। ব্রাজিল, ক্যালিফোর্নিয়া ও অন্যান্য স্থানেও করোনাভাইরাসের ভিন্ন ভিন্ন ধরন পাওয়া গেছে। তেমন একটি ধরন হলো বি.১.৩৫১, যা প্রথম শনাক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকাতে। এই ধরনটি সেসব মানুষকে পুনরায় সংক্রমিত করতে পারে যারা করোনাভাইরাসের প্রাথমিক সংস্করণ বা মূল কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসকদের মতে, কোনো ভাইরাসের নতুন ধরন তখনই দুশ্চিন্তার কারণ হবে যদি এটি চিকিৎসা ও প্রতিরোধের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি বিপজ্জনক কিনা তা নিশ্চিত হতে আরো কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।
এটা ঠিক যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বি.১.৩৫১ করোনাভাইরাসের মূল ধরনটির চেয়ে বেশি ছোঁয়াচে। কিন্তু এটি তুলনামূলক বেশি বিপজ্জনক এমন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তারপরও করোনাভাইরাসের নতুন ধরনগুলো প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। ল্যাবরেটরি স্টাডিতে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, চলতি ভ্যাকসিন প্ররোচিত কিছু ইমিউন রেসপন্স করোনাভাইরাসের কিছু নতুন ধরন মোকাবিলায় কম কার্যকর হতে পারে। ইমিউন রেসপন্স অনেক উপকরণের সঙ্গে জড়িত। তাই এগুলোর একটি কমে যাওয়ার মানে এটা নয় যে, চলতি ভ্যাকসিন থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে না। ডা. বোলিঙ্গার বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর ফ্লু ভাইরাসের পরিবর্তন দেখে আসছি। হয়তো ভবিষ্যতে এই ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসেরও বহু পরিবর্তন দেখবো।
যদি বড় ধরনের মিউটেশন ঘটে, তাহলে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রক্রিয়ায়ও ব্যাপক পরিবর্তন সাধনের প্রয়োজন হতে পারে।’ এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যতগুলো নতুন ধরন পাওয়া গেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে বি.১.১.৭ এবং বি.১.৩৫১। ডা. বোলিঙ্গার বলেন, ‘বি.১.১.৭ নামক নতুন ধরনটিতে ১৭টি জেনেটিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। কিছু গবেষণার প্রাথমিক প্রমাণ এই যে ধরনটিতে সংক্রমণের হার বেশি’। তিনি আরো জানান যে বি.১.১.৭ সংস্করণটির কিছু পরিবর্তন করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে প্রভাবিত করেছে। স্পাইক প্রোটিন হলো করোনাভাইরাসের বহিঃস্থ আবরণ। দেখতে কাঁটার মতো। প্রোটিনগুলো করোনাভাইরাসকে মানুষের নাক, ফুসফুস ও শরীরের অন্যান্য স্থানে সংযুক্ত হতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে এই মুহূর্তে সুস্থ থাকার একমাত্র উপায় সচেতন থাকা। অর্থাৎ মাস্ক ব্যবহার করা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।